ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৩/০৯/২০২৫ ৭:১৪ এএম

ফাতিমা তাসনিম জুমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকবার সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেটা ছিল মূলত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে নিয়মিতভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন তিনি। তবে এখন আর শুধু ছাত্রলীগ নয়, বরং ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের পক্ষ থেকেও এমন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন জুমা। শুধু অভিযোগ নয়, বরং ছাত্রদল, বাগছাস, বাম ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবমাননাকর পোস্ট বা কমেন্টের ৬৯৪টি স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করেছেন বলেও সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে জানিয়েছেন জুমা।

এর আগে ওই দিন বিকেলে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন করা বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১’, ‘অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়ে আলী হুসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের এক ছাত্র ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। বিষয়টি ভাইরাল হলে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে তার শাস্তিও দাবি করেন তারা। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। যদিও আগেই ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এটা তাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে এই ছেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে ফেসবুকে লাইভে এসে সেই আলী হুসেনও দাবি করেন, তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন।

এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে এমন অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনা তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় তিন সদস্যের এবং ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন দুই সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি করেছে।

এর আগে এসব বিষয়ে ফাতিমা তাসনিম জুমা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার কাছে ছয় শতাধিক ক্রিনশট রয়েছে- যেখানে ছাত্রদল, বাগছাসের নেতাকর্মীরা তাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তাকে নিয়ে অশ্লীল ভিডিও বানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, আজকে এক নারী প্রার্থীকে (বি এম ফাহমিদা প্রসঙ্গে) গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদ হওয়া জরুরি। কিন্তু সেটা যদি হয়; তাহলে আমার ঘটনাগুলোতে কেন হবে না? আমার প্রশ্ন এখানে।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে কয়েকটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে জুমা লেখেন, ছাত্রদল, বাগছাস, বামপন্থি ও লীগের ৬৯৪টি স্ক্রিনশট সিলেক্টিভ প্রতিবাদীদের মুখে ছুড়ে দিতে পোস্ট করবো, নাকি ড্রাইভ লিংক করে দিবো পরামর্শ দিন। আর যেসব সুশীলরা বলতেছেন গণধর্ষণ খারাপ ওয়ার্ড, …. ভালো ওয়ার্ড তাদের হিপোক্রেসি ও বাইর কইরা ছাড়বো।

তিনি আরও লেখেন, আমি উমামা ফাতেমা আপুর সাথে একদিন কথা বলছিলাম যে, সব প্যানেলের সবাই মিলে মেয়েদের ইস্যু নিয়ে কথা বলি লিগ্যালি যাই। কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷ মায়েদ ভাইকে নক দিয়েছি তার দলের ব্যাপারে কার কাছে অভিযোগ দিলে সমাধান হবে জানাতে। সে বলছে কী নোংরামি হচ্ছে জানেই না। ফাহমিদার জন্য বিচার চাই। যেমন আগেও মনসুরা/সীমা/ইমি/উমামার জন্য চেয়েছি। সেই সাথে তাদেরও বিচার চাই আমার সাথে হওয়া অন্যায়কে পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার জন্য।

এদিকে, সোমবার দিবাগত রাতে জুমা আবু বাকের মজুমদারকে নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাগছাসের সর্বোচ্চ নেতা Md. Abu Baker Mojumder টকশোতে গিয়ে জাস্টিফাই করেছে আমি যেহেতু ওপেন গালাগালি করি তাই শ্লাটশেমিং আমাকে করাই যায়। আজকে NCP এর এক নেতা সেই জাস্টিফিকেশন হিসেবে লীগ নিষিদ্ধের দিনে তাদের গাদ্দারির জন্য দেওয়া গালিকে সামনে নিয়ে আসছে। মানে যেহেতু আমি স্ল্যাং ইউজ করি আমার নগ্ন ভিডিও বানিয়ে সারফেস করা জাস্টিফাইড।

আপনাদের দুইজনসহ সবার উদ্দেশ্যে বলি, জুলাইতে গালি দেওয়া শুরু করসিলাম পাবলিকলি। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছি লীগ আর যে লীগের দালালি করবে তাদের জন্য। যারা জুলাইয়ের শহিদদের সাথে গাদ্দারি করতে চাইবে তাদের আবার ★ পোলা বলবো।’’

এসব বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ফাতিমা তাসনিম জুমার সঙ্গে কথা হয় আমার দেশের।

আপনার বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছি, প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিবেন কি না- জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কাল-পরশুর মধ্যে আমার সব ডকুমেন্ট রেডি হলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যাব।

নির্বাচনের আগে হয়তো এ ধরনের বুলিংয়ের ঘটনা আরও বাড়বে, সেগুলো মোকাবিলা করে এগুতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফাতিমা তাসনিম জুমাও শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ডাকসু নির্বাচনের আগে এ ধরনের সাইবার বুলিং আরও অনেক বেড়ে যাবে, যেটা সামলানোর কোনো উপায় থাকবে না। এটার জন্য প্রশাসনকে আগে থেকেই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে মনে হয় না এগুলো সামলানো যাবে।

তিনি আরও বলেন, এসব পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করব, তা এখনো জানি না। আপাতত ধৈর্য ধরে থাকছি। আর এসব বিষয়ে সকল দল যদি একতাবদ্ধ না হয়; তাহলে মনে হয় না, কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

শেষ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হবে কি না, আপনি কী মনে করেন? অবশ্যই, নির্ধারিত সময়েই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, বলেন ফাতিমা তাসনিম জুমা।

পাঠকের মতামত

এইচএসসির স্থগিত ২২ ও ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষা একই দিনে: শিক্ষা উপদেষ্টা

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের দুটি ...

মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত, তথ্য উপদেষ্টার মধ্যরাতের ঘোষণা

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মধ্যরাতে এ ...

স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বাদ যাচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা

স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ পদে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত করার ...